পরিবার পরিকল্পনা | জীবনধারণের একটি পদ্ধতি যা একজন ব্যক্তি বা দম্পতি স্বেচ্ছায় গ্রহন করবে সবকিছু নিজেরা জেনে , যাতে নিজের পরিবারের লোক সংখ্যা নিজের ইচছানুযায়ী সীমাবদ্ধ রাখা যায় এবং যা সমাজ জীবন ও পরিবারের উন্নায়নে সহায়ক হবে । পরিবার পরিকল্পনা বলতে কতগুলো অভ্যাস বুঝায় , কোন বেক্তি বা দম্পতিকে কতগুলো উদ্দেশ্য সাধনের সাহায্য করে । যেমনঃ ১। অনাকাক্ষিত জম্নকে এড়িয়ে চলা যায় । ২। ইচ্ছামতো( wanted birth) বাচ্চা নেয়া যায় । ৩। দুইটা গর্ভের মধ্য সময় কন্ট্রোল করা যায় । ৪। বাবা, মা কোন বয়সে বাচ্চা নিবেন সেটা নির্ধারণ করা যায় । ৫। সন্তানের সংখ্যা নির্ধারণ করা যায় । বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা । যা অনতিবিলম্বে কন্ট্রোল আনা একান্ত প্রয়োজন । বর্তমানে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.১% ভাগ । সুতারাং স্বাস্থ্য কর্মী ও পল্লী চিকিৎসকদের অন্যতম গুরুদায়িত্ব হচ্ছে পল্লী বা গ্রামগঞ্জের কুসংস্কারাচ্ছান্ন মানুষের বোঝানো ।
èপরিবার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যঃ ১। অনাকাক্ষিত জম্নকে এড়িয়ে চলা যায় । ২। ইচ্ছামতো( wanted birth) বাচ্চা নেয়া যায় । ৩। দুইটা গর্ভের মধ্য সময় কন্ট্রোল করা যায় । ৪। বাবা, মা কোন বয়সে বাচ্চা নিবেন সেটা নির্ধারণ করা যায় । ৫। সন্তানের সংখ্যা নির্ধারণ করা যায় । ৬। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রনে রাখা । ৭। বারবার / অকাল গর্ভপাত বা অ্যাবরশান কমানো যায় । ৮। দারিদ্রতা দূর করা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করে দেশের উন্নয়ন করা । ৯। দেশের উন্নয়নমূলক কাজ-কর্ম বাড়ানো যায় । ?জম্ননিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিসমূহঃ আমাদের দেশে জম্ননিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি দুইটি । স্থায়ীও অস্থায়ী পদ্ধতি । ?স্থায়ী পদ্ধতিঃ ১। পুরুষের ভ্যাসেকটমি ২। মেয়েদের লাইগেশন এ দুটির মধ্য ভ্যাসেকটমি সুবিধাজনক। এতে · রোগীর হাসপাতালে থাকতে হয় না । · ২ দিনের মধ্যেই সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে · সহজ অপারেশন , জতিলতা কাম । · যৌন ক্ষমতা কমে যায় না । স্থায়ী পদ্ধতি কোন দম্পতিরা গ্রহন করবে---- ১। পরিবারে কম পক্ষে ২ টি সন্তান থাকবে । ২। ২য় বাচ্চার বয়স কম পক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে । ৩। ২টি বাচ্চার কোন রকম বড় ধরনের রোগ নেই এবং ই পি আই’র টিকা দেয়া থাকবে । ৪। দম্পতির দুই জনের সম্মতি থাকতে হবে । ৫। স্ত্রীর বয়স ২০ এর উপরে ও ৪০ এর নিচে , স্বামীর বয়স ৩০ এর উপরে এবং ৫০ এর নিচে নয় । স্থায়ী পদ্ধতির সুবিধাও অসুবিধাঃ
স্থায়ী পদ্ধতির সুবিধাঃ ক. এই পদ্ধতি একবারই গ্রহণ করা যায় । খ. এই পদ্ধতি ১০০% কার্যকরী । গ. বিনামূল্য গ্রহণ করা যায় । ঘ. পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়া কম হয় ।
স্থায়ী পদ্ধতির অসুবিধাঃ ক. এই পদ্ধতি সবাই সব বয়সে গ্রহণ করতে পারে না । খ. অপরিবর্তনীয় পদ্ধতি ( এই পদ্ধতি এক বার গ্রহণ করলে সন্তান জম্ন দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । সন্তান জম্ন দেবার ক্ষমতা ফিরে পেতে ব্যয়বহুল এবং জটিল কোন কোন ক্ষেত্রে তা অসম্ভব। গ. অপারেশনের পর ইনফেকশন ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে । ঘ. মানুষিক ও সামাজিক সমস্যা হতে পারে । ঙ. উচ্চ রক্ত চাপের রোগী, হার্টের রোগী এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ঝুকিপূর্ণ পদ্ধতি ।
?অস্থায়ী পদ্ধতিসমূহঃ ১। নিরোধ পদ্ধতি ২। হরমোন পদ্ধতি ৩। মেকানিক্যাল পদ্ধতি ৪। প্রাকৃতিক পদ্ধতি
?নিরোধ পদ্ধতি ক. কনডম খ. ফোম ট্যাবলেট
?মেকানিক্যাল পদ্ধতি ইন্ট্রা ইউটেরাইন কপার ডিভাইস যেমনঃ কপার টি ।
?হরমোন পদ্ধতি ক. খাবার ট্যাবলেট খ. ইনজেকশন গ. চামড়ার নিচে ইমপ্লান্টঃ নর প্লান্ট
?প্রাকৃতিক পদ্ধতি ১। সেফ পিরিয়ডঃ মাসিকের পূর্বে ১০ দিন ও পর্বতি ৫ দিন । তবে এটা খুব বেশি কার্যকরী পদ্ধতি না । ২। সঙ্গমের সময় বাহিরে স্থুলন । ৩। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো । আমাদের দেশে তিন / চারটি পদ্ধতি খুবিই জনপ্রিয় । এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
èOral Pill (খাবার ট্যাবলেট) আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলোর মধ্যে খাবার পিল ১ নম্বরে । বিভিন্ন ধরনের খাবার ট্যাবলেট সহজে পাওয়া যায় । যেমনঃ · ফেমিকোন · ফেমিপিল · মিনিকন · ওভাসটেট · নরডেট · ডেসলন ইত্যাদি
সুবিধাঃ * ৯৯% সফল পদ্ধতি । *সহজে বন্ধ করা যায় । *যৌন সঙ্গমে বিরতি দিতে হয় না । *সুলভ ও সহজলভ্য । *পরবর্তী জম্নদানে অসুবিধা হয় না ।
অসুবিধা সমূহঃ * সব মহিলারা খেতে পারে না । যেমনঃ উচ্চ রক্ত চাপ, লিভারের রোগ, ক্যান্সারের রোগীরা । * প্রতি দিন খেতে হয় । পর পর দুই দিন বাদ পরলে ঐ মাসে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে । * পার্শ্বপ্রতিক্রীয়া বেশি । যেমনঃ মাথা ঘুরানো , বমি , বমি বমি ভাব, স্তন টনটন করা, মাথা ব্যথা, ডিপ্রেশন বা অবসন্নতা ভাব ইত্যাতি । * দীর্ঘ ব্যবহারে কিছু সমস্যা হতে পারে । তাই এক নাগাড়ে তিন বছরের বেশি ব্যবহার করা উচিত না । অনেক সময় বন্ধ্যত্ব হয়ে যাবার সম্বাবনা থাকে ।
Condom( কনডম) এটা খুব সস্তা দামে ও সহজলভ্য পদ্ধতি । রাবারে তৈরি । সঙ্গমের পূর্বে উল্থিত লিঙ্গে পড়তে হয় । কনডম ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা করা হলঃ সুবিধাঃ · সস্তা ,সহজে ব্যবহার্য এবং কার্যকর ৮৯% · মাসিক চক্রের যেকোন সময় ব্যবহার করা যায় এমন কি নব দম্পতির জন্য এই পদ্ধতি আদশ । · কোন পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়া নাই বললেই চলে । · এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পরামর্শর জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয় না । · যৌন রোগ থেকে রক্ষা করে । · বীর্য পরীক্ষার জন্য এবং বীর্য সংগ্রহর একটি সহজ পদ্ধতি ।
অসুবিধাঃ · ১০০% কার্যকরী নয় । · ফেটে বা ছিঁড়ে যেতে পারে । · অনেক দম্পতি / মহিলারা পূর্ণ যৌন তৃপ্তি পায় না । · অনেকে বিরক্তি বোধ করেন কারণ সঙ্গমের চূড়ান্ত সময়ে পড়তে হয় । · অনেকের রাবারে অ্যালারজি হয় ।
ইনজেকশন( injection) আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জে মহিলাদের এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় । আমাদের দেশে যেটি পাওয়া যায় সেটি হল Inj. Dept Provera এতে হরমোন থাকে । এই ইনজেকশন সরকারী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ফ্রী পাওয়া যায় । এই পদ্ধতি যাদের একটি বাচ্চা আছে তারা গ্রহন করতে পারে । · ইনজেকশন ডিপট প্রভেরা ১৫০ মি.গ্রাম ৩ মাস অন্তর অন্তর দেয়া ( নিতম্বের মাংসপেশিতে) হয় ।
সুবিধাঃ * এই পদ্ধতি ১০০% কার্যকরী । * ফ্রী কিছু ক্ষেত্রে কিনতে হয় তবে দামে সহজ । * যে কোন সময় বন্ধ করা যায় । * স্তন দানে অসুবিধা হয় না । * দুধ পান করান এমন মায়েদের উপর কোন প্রভাব পরেনা ।
অসুবিধাঃ · স্বাভাবিক মাসিক চক্র নষ্ট হয় । · মাসিক বন্ধ হয়ে যায় । · ওজন বৃদ্ধি পায় । · ক্যান্সার হবার সম্বাবনা বাড়ে । · এই পদ্ধতি ছেড়ে দেবার পর গর্বধারনের ক্ষমতা ফিরে পেতে সময় লাগে ।
কপার টি( Copper –T)
এটি ( T) আকৃতি পেঁচানো তার । ডাক্তাররা যোনি পথের মাধ্যমে এটা জরায়ুতে পরিয়ে দেন। কপার টি বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায় । ৩ বছর হতে ৭ বছর মেয়াদী । এই কপার টি পদ্ধতি বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়তা বারছে । কপার টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে পাওয়া যায় । কপার টি কাদের জন্য সুবিধাজনক পদ্ধতি তা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ · যে দম্পতির অন্তত একটি বাচ্চা আছে । · যাদের মাসিক চক্র নিয়মিত আছে । · যে কপার টির সুতা নিজে নিজেই চেক করতে পারবে । · কোন জটিলতা হলে তার নিজের চিকিৎসা করতে পারবে ।
îকপার টি পরানো হয় কখনঃ · মাসিকের সময় অথবা মাসিক শুরু হবার ১০ ম দিনের মধ্যে । · বাচ্চা প্রসবের ৬-৮ সপ্তাহের পর ।
সুবিধাঃ · খরচবিহীন,সোজা পদ্ধতি এবং এটা পরার জন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না । · একবার এই পদ্ধতি নিলে অনেক দিন থাকে ( প্রায় ৮ বছর ) । · যদি ব্যবহার কারী ইচ্ছা করেন যে কোন সময় খুলে ফেলতে পারেন । · Lactation অর্থাৎ দুগ্ধ পান কারী মায়েদের উপর কোন প্রভাব পড়েনা ।
অসুবিধাঃ · এই পদ্ধতি ৯৫-৯৭% কার্যকরী । · পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মাসিক স্রাব বন্ধ , পেছনে ব্যথা , তল পেট ব্যথা , পায়ে ব্যথা, কোমর ব্যথা ইত্যাদি · জরায়ু ছিদ্র হয়ে যায় অনেক সময় । · জরায়ুর বাহিরে গর্ভধারন । · কপার টি বাইরে পরে যেতে পারে ।
লাইগেশন( Tubeotony)
এটা পদ্ধতি হল মেয়েদের বন্ধ্যাত্বকরণ পদ্ধতি । দুই পাশের ডিম্বনালী কেটে আবার বেধে দেয়া হয় । এই পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা নিচে দেয়া হলঃ সুবিধাঃ · এই পদ্ধতি ১০০ ভাগ কার্যকারী । · জনগনের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য । · বাংলাদেশে এই অপারেশন বিনা পয়সায় এবং বিভিন্ন জায়গায় করা হয় । · এই অপারেশন রেজিস্টার কৃত যে কোন ডাক্তার করতে পারে ।
অসুবিধাঃ · এটি একটি স্থায়ী পদ্ধতি । · মহিলারা চিরদিনের জন্য বন্ধ্যা হয়ে যায় । · ১ সপ্তাহ হসপিটালে থাকতে হয় । · কিছু সমস্যা হতে পারে ।
ভ্যাসেকটমি (Vasectomy)
এই পদ্ধতি হল পুরুষ স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব করণ পদ্ধতি । পুরুষের দুই পাশের শুক্রনালী কেটে হেয়া হয় এবং দুই পাশে বেধে দেয়া হয় । এই নালী কেটে দেয়ার ফলে শুক্রগুলো অণ্ডকোষ থেকে যৌনঙ্গে আসতে পারেনা । যার কারনে সে আর বাবা হবার ক্ষমতা রাখেনা ।
সুবিধাঃ · সহজ অপারেশন । · কার্যকরী ১০০% । · লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দ্বারা এই অপারেশন করা হয় । · ২৪ ঘণ্টা পর রোগী তার স্বভাবিক কাজ কর্ম করতে পারে । · এটা লাইগেসনেন চেয়ে সহজ ।
অসুবিধাঃ
· স্থায়ী পদ্ধতি । · অপারেসনের পর ব্যথা , ঘা হতে পারে ।
ভ্যাসেকটমি করার পর উপদেশঃ
· অপারেশন করার পর ১৫ দিন ভারি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে । · সাইকেল চালানো নিষেধ । · অপারেশনের ২৪ ঘণ্টা পর গোসল করবে । · ৫ – ৭ দিন পর সেলাই কাটতে হবে । · যৌন মিলন থেকে ১৫ দিন বিরত থাকবে · অপারেশনের পর তিন মাস পর্যন্ত বাচ্চা জম্ন দিতে পারে ।
লেখকঃমো.আবদুল হাই রাহাত প্যারামেডিক
|
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস