শিরোনাম
বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিবস আজ
বিস্তারিত
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস আজ। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এ নেতা ১৯২০ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি জাতি ও সমগ্র দেশ মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে। জাতির জনককে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে প্রাণ দিতে হয়েছিল।আজ সরকারি ছুটির দিন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।
সারা বিশ্বে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদের জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন। বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। বিশ্বের ১০০টি বিখ্যাত ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম।
বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এছাড়াও মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো দু’দিনের বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামীকাল ১৮ মার্চ শুক্রবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারা দেশের জেলা ও উপজেলা সদরে দিনটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিশু সমাবেশ, র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা সদরে সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ডিএফপি ও গণযোগাযোগ অধিদফতরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী পুস্তক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সারা দেশে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু ১৯৪৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন।
তার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশভাবে বিজয়ী হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির বহু আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। কিন্তু দেশী-বিদেশী স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রে মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই তাকে স্ত্রী-সন্তানসহ জীবন দিতে হয়। তার দুই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ তার রক্তঋণ কোনোদিন ভুলবে না।
জন্মদিবসের কর্মসূচি
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু কিশোর দিবস উপলক্ষে আজ সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশেষ সেবা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে বিনামূল্যে রোগী দেখবেন। পাশাপাশি রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিও পরিচালিত হবে। এছাড়া সরকারি সব হাসপাতালে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালানো হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৮টায় ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বিএসএমএমইউ : দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবাসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নেতৃত্বে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন, সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবার (পরামর্শসেবা) উদ্বোধন (চিকিৎসাসেবা চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত), সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবনের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জন্মদিনের প্রাক্কালে রাত ১২টা ১ মিনিটে রয়েছে বিশেষ আয়োজন। এছাড়া চারুকলা অনুষদের ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুর ১২টায় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সকাল সাড়ে ১০টায় টিএসসিতে আলোচনা সভা, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সঙ্গীত বিভাগের উদ্যোগে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর : বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মদিবস উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশভিত্তিক পুস্তক, পত্র-পত্রিকা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় অধিদফতরাধীন জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রদর্শনী কক্ষে পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হবে।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম : দিবসটিতে ফানুস উড়িয়ে পথশিশুদের কেক কেটে খাওয়াবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবসে বিশেষ প্রার্থনা সভা ও মিষ্টি বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। এছাড়া একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি।
বই প্রকাশ : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত হল ইতিহাস আশ্রিত তথ্যনির্ভর বই ‘৩২ নম্বর বাড়ি ও সুধাসদন যে ইতিহাস সবার জানা দরকার’। লেখক ভিয়েনা প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এম নজরুল ইসলাম। সুবর্ণ প্রকাশিত দৃষ্টিনন্দন বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী হাসেম খান।
এছাড়া দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে দিনব্যাপী আলোচনা, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, বঙ্গমাতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, ইডেন মহিলা কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বঙ্গবন্ধু জয়বাংলা লীগ, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, অভয় বিনোদিনী উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু গবেষণা ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, মুজিবসেনা ঐক্য লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদ।